উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর: বিপণন বা ‘Marketing’ শব্দটি আমাদের জীবনের সাথে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আমরা হরহামেশা এ শব্দটি ব্যবহার করি অথবা শুনি। দোকানে বা শপিং সেন্টারে কিছু কেনাকাটা বা শপিং করতে গেলে আমরা অনেকেই বলি মার্কেটিং করতে গিয়েছিলাম, যা সম্পূর্ণ ভুল। অনেকেই আবার মার্কেটিং-এর ধারণাকে বিক্রয় এবং বিজ্ঞাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন, যা মোটেও সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, বিপণনের ধারণাটি অনেক ব্যাপক বা বিস্তৃত। মানুষের প্রয়োজন অনুসন্ধান থেকে শুরু করে তার সন্তুষ্টিবিধান ও প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য করা সব কাজই বিপণনের অন্তর্ভুক্ত।
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ২য় পত্র ১ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন-১. বিপণন ক্রমবিকাশের কোন যুগে উৎপাদন ব্যবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ১৮৬০ থেকে ১৯২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
এ সময়কালকে উৎপাদন যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ যুগের প্রথমদিকে সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থনীতি পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হতো। একপর্যায়ে বিনিময় কার্যক্রমের মাধ্যমে উৎপাদন ও ভোগের ব্যবস্থা আলাদা হয়ে যায়। এ সময় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থায় নাটকীয় পরিবর্তন আসে। বিশেষত বর্ধিত চাহিদা পূরণে বেশি পরিমাণে উৎপাদন শুরু হয়।
প্রশ্ন-২. বিপণনের স্বর্ণযুগ কোনটি? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিপণনের স্বর্ণযুগ হলো সামাজিক যোগাযোগ বা মোবাইল মার্কেটিং যুগ। ২০১০ সাল থেকে এ যুগের সূচনা হয়। এ যুগে বিপণন কাজে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করা শুরু হয়। এক্ষেত্রে পণ্য বা সেবা বিপণনের ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ফেসবুক, ইমো, ওয়েবসাইট, প্রভৃতি মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতার যোগাযোগ স্থাপিত হয়। আর এ যুগ বিপণন কাজকে যেমন গতিশীল ও সহজ করেছে তেমনি ক্রেতা সাধারণের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।
প্রশ্ন-৩. “বিপণন একটি ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সর্বোচ্চ ক্রেতা ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে পণ্য তৈরি, বণ্টন ও প্রচার সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনা করাকে বিপণন বলে। সুষ্ঠুভাবে বিপণন কার্যাবলি পরিচালনা করতে পরিকল্পনা তৈরি, সংগঠন, কর্মীসংস্থান, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিতে হয়। এসব কর্মসূচি ব্যবস্থাপকীয় কার্যাবলির অন্তর্ভুক্ত। তাই বিপণনকে ব্যবস্থাপকীয় প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।
প্রশ্ন-৪. “বিপণন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
সময়ের সাথে সাথে ভোক্তার জীবনযাত্রার মান, বুচি, পছন্দ, ক্রয়ক্ষমতা, ক্রয় আচরণ প্রভৃতির পরিবর্তন হয়। এরূপ পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ভোক্তাকে সন্তুষ্ট করতে বিপণনকারীকে বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয়। অথাৎ, বিপণন কার্যাবলি সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। তাই বলা হয়, বিপণন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন-৫. “বিপণন একটি সামাজিক প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
সমাজের মানুষকে ঘিরেই বিপণনের সব কাজ পরিচালিত হয়। সমাজের জন্য ক্ষতিকর এবং নিরাপদ নয় এমন সব পণ্য ও সেবা বিপণনের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিপণনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক কল্যাণ ও সব শ্রেণির মানুষের প্রয়োজন ও অভাব পূরণের চেষ্টা করা হয়। তাই বলা যায়, বিপণন হচ্ছে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া।
প্রশ্ন-৬. “বিপণন একটি ভোক্তামুখী প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
‘ভোক্তারাই রাজা’-এ স্লোগানকে ঘিরে ভোক্তাদের মতামত, তাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিয়ে বিপণন কার্যাবলি পরিচালনা করা হয়। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করা হয়। তাদের নিত্য নতুন চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই বিপণন কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলে বিপণনকে ভোক্তামুখী প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রশ্ন-৭. “বিপণন একটি বিনিময় প্রক্রিয়া” -ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
কোনো কিছু দিয়ে অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাশিত পণ্য বা সেবা নেওয়ার উপায়ই হলো বিনিময়। এক্ষেত্রে একপক্ষ (বিক্রেতা) কিছু দেয় এবং অপরপক্ষ (ক্রেতা) প্রতিদানের বিনিময়ে তা নেয়। বিপণনের ক্ষেত্রেও ক্রেতা বিপণনকারীর কাছ থেকে পণ্য বা সেবা নেয়। তাই বিপণনকে বিনিময় প্রক্রিয়া বলা হয়।
প্রশ্ন-৮. বিপণন কীভাবে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে?
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
বিপণন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের আয় বাড়াতে সহায়তা করে। আবার, ক্রেতাদের প্রত্যাশিত পণ্য বা সেবা কেনার সুযোগ সৃষ্টি করে। এভাবে আয় এবং ভোগের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে বিপণন জীবনযাত্রার মান উন্নত করে।
প্রশ্ন-৯. বিপণন কীভাবে সামাজিক চাহিদা পূরণ করে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং সর্বোপরি বিভিন্ন সামাজিক কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে এটি সামাজিক চাহিদা পূরণ করে।
বিপণন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার কাছে পৌছানোর বিভিন্ন ধাপে মধ্যস্থব্যবসায়ীর প্রয়োজন হয়, যা কর্মসংস্থানের উৎস। এ কর্মসংস্থান মানুষের আয় বাড়ানোর মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করে থাকে। এছাড়াও বিপণনের বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক মতাবাদ আছে। যেমন: পরিবেশ বাঁচান-নিজে বাঁচুন, পলিথিন বর্জন করুন- এগুলো গ্রিন মার্কেটিং-এর নিত্য নতুন বিষয়বস্তু। আর এগুলো সমাজের মানুষের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের মাধ্যমে কল্যাণ বয়ে আনে।
প্রশ্ন-১০. “বিপণন শক্তিশালী ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি করে”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
ক্রেতা সন্তুষ্টি বিধান করাই হলো বিপণনের মূল উদ্দেশ্য। বিপণনের মাধ্যমে মানসম্পন্ন পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এতে ক্রেতাসন্তুষ্টি বাড়ে এবং বিপণনকারীর সাথে ক্রেতাদের শক্তিশালী সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন-১১. বিপণন কীভাবে ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধান করে?
উত্তর: ভ্যালু সৃষ্টির মাধ্যমে লাভজনক উপায়ে ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধান, দীর্ঘমেয়াদি ক্রেতা সম্পর্ক সৃষ্টি ও তা বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে বিপণন বলে।
ভোক্তাদেরকে ঘিরেই বিপণন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাদের মতামত, তাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাহিদা ইত্যাদিকে প্রাধান্য দিয়ে পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করা হয়। ভোক্তাদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্য তৈরি করা হয়। এভাবে বিপণন ভোক্তা সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
প্রশ্ন-১২. “চাহিদার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত প্রযোজ্য” ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সাধারণত কোনো পণ্য বা সেবা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা এবং তা কেনার সামর্থ্য ও অর্থ ব্যয়ের ইচ্ছাকে চাহিদা বলে। কোনো অভাবকে চাহিদায় পরিণত করতে হলে ব্যক্তির কোনো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বা অভাব পূরণের ইচ্ছা থাকতে হয়। এছাড়াও ইচ্ছা পূরণের আর্থিক সামর্থ্য এবং অর্থ ব্যয় করার ইচ্ছা থাকতে হবে। এই তিনটি শর্ত মানলেই কেবল তাকে চাহিদা বলা যায়। তাই বলা যায়, চাহিদার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত প্রযোজ্য।
আরও দেখুন: উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন ১ম পত্র ৮ম অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
আশাকরি আমাদের আজকের আর্টিকেল টি ভালো লেগেছে। কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে বা আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্টে আমাদের জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন সবাই, ধন্যবাদ।